বাংলাদেশের পথেঘাটে বাড়ছে নারী হয়রানি
ঢাকা ইনসাইডার
০৯ অক্টোবর ২০২৪
ছাত্রজনতার অভ্যূত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতের পর থেকেই দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে।
ছাত্রজনতার অভ্যূত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতের পর থেকেই দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে।
রাস্তাঘাটে মব জাস্টিসের নামে চলছে বিচার বহির্ভূত হত্যা, নারীদের হয়রানিসহ নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। বেড়েছে চুরি ও ছিনতাইয়ের উপদ্রব।
চলার পথে বিভিন্নভাবে নারীরা হয়রানি ও কটুক্তির শিকার হচ্ছেন। পরিধেয় পোশাক নিয়ে নানা প্রশ্নের সন্মুখীন হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে।
সম্প্রতি ধানমন্ডি ২৭ এর ফুটওভারব্রীজে পর্বতারোহী শায়লা বিথীর উপর হঠাৎ আক্রমণ করে বসে এক ব্যক্তি। চুলের মুঠি ধরে মারতে শুরু করে। সারা গায়ে আঘাত করে। এক পর্যায়ে নাক ও ঠোঁট ফেটে যায়। এ নিয়ে থানায়ও অভিযোগ করেন তিনি।
পরবর্তীতে জানা যায়, টি শার্ট পরে বাইরে বের হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে অচেনা এক যুবক এ কান্ড ঘটান।
দিনে দুপুরে এমন ঘটনা নারীদের মাঝে ত বটেই, দেশের সাধারণ মানুষের দুঃশ্চিন্তার কারণ হিসেবে দেখা দেয়। মাত্র মাস তিনেক আগেও ঢাকার রাস্তা এতটা অনিরাপদ ছিলনা বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
নারীদের হয়রানি নিয়ে অনেকেই সরব হচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একজন তার অভিজ্ঞতা লিখলে আরও অনেকেই রাস্তায় বা গণপরিবহনে অপমানিত হওয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন।
অবন্তি নাগ প্রমি নামের এক নারী ফেসবুকে লিখেছেন, "কাল আটটায় ক্লাস। ছয়টার পরপর বের হতে হবে। কী পরবো ভাবতেছি কারণ এত সকালে মানুষ কম থাকলে খারাপ কিছু হতে পারে।"
মাইশা মেহজাবিন প্রিয়তী লিখেছেন, "রাস্তায় কি নারী হয়রানি বেড়েছে নাকি শুধু আমার ক্ষেত্রেই এমন হচ্ছে?"
লামিসা জামান নামের একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, "আমার গত ২০ বছরের জীবনে যত কথা রাস্তায় 'মেয়ে' হিসেবে শোনা লাগছে তার তিন গুণ বেশি ইদানীং শোনতে হয়।"
গত মাসের ১৯ তারিখ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে পূর্ব ঘোষণা দিয়ে হিন্দু পরিবারের দশম শ্রেণি পড়ুয়া এক মেয়েকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা।
অক্টোবরের ১ তারিখে ঢাকাতে সংগীতা নামের এক নারী অধিকার কর্মী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা অপরাজিতা সঙ্গীতার সাথে ঘটে এক ভয়াবহ ঘটনা। এক বয়স্ক লোক তার পোশাক নিয়ে আপত্তি তুলে গালাগাল করতে থাকেন। শেষে লোকটি গায়ে থু থু দিয়ে চলে যান।
ওড়না ছাড়া পোশাক পরায় সেই ব্যক্তি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে গালাগাল শুরু করেন বলে জানিয়েছেন অপরাজিতা।
অন্যদিকে, সম্প্রতি বাংলাদেশের ইসলামপন্থী বেশ কয়েকটি দলের দায়িত্বশীল নেতারা নারী স্বাধীনতা নিয়ে খুবই নেতিবাচক ও আক্রমাণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন যা নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
ইসলামপন্থী একটি দলের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা অল্প কদিন আগে বলেছেন, বাইরে বের হওয়া নারীদের শরীরের যে অংশ উন্মুক্ত থাকবে সেখানে আলকাতরা লেপ্টে দিতে হবে।
ইসলামপন্থী দলগুলো আগে থেকেই নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণকে নেতিবাচক হিসেবে নিয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিক এমন আক্রমণাত্বক মন্তব্য নারীদের ভেতর নতুন করে ভীতির সঞ্চার করছে।
ঢাকাস্থ একজন নারী অধিকার কর্মী জানান, সরকার কেন এই ঘটনাগুলোর ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেনা তা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। নারী হয়রানির ঘটনা যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, মিডিয়ায় আসছে তাতে এসব তথ্য সরকারের দৃষ্টিগোচর না হওয়ার কথা না।
তিনি মনে করেন, এভাবে চলতে থাকলে নারীরা আস্তে আস্তে গৃহবন্দী হয়ে পরবে, পিছিয়ে পরবে। এতে আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে তারা অবদান রাখতে পারবেনা যার প্রতিফলন ঘটবে সমাজ তথা জাতীয় অর্থনীতিতে।